নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা থেকে ফিরেছেন শূন্য ঝুড়ি নিয়ে। একহাতে ব্যাগ, অন্যহাতে দীর্ঘশ্বাস। কারণ? পাতে ইলিশ উঠবে এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন, চোখ খুলতেই দেখলেন— সেটা এখন ধনীদের বিলাসিতা!
জাতীয় মাছ ইলিশ, যা এক সময় বর্ষা এলেই ঘরে ঘরে ঝোল-ভাজি হয়ে উঠত উৎসবের অংশ, এখন যেন কেবল স্মৃতির পাতায়। ঢাকার বাজারে এক নজর ইলিশ দেখাই ভাগ্যের বিষয়, আর কিনে ঘরে ফেরা— সেটা যেন রূপকথার গল্প!
রামপুরা বাজারে সকাল ১১টায় গিয়েই দেখা মিলল বাস্তবতার নির্মম রূপ। আগে যেখানে চার-পাঁচটি দোকানে ইলিশ ঝলমল করত, এখন সেখানে কেবল একটিতে। তাও দাম এমন যে শুনে মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন যেকোনো মধ্যবিত্ত। এক কেজি ওজনের ইলিশ— ২ হাজার ৮০০ টাকা! ৬০০ গ্রাম সাইজের কেজি ২ হাজার!
বিক্রেতা নুর আলমের কণ্ঠে খানিক হালকা আফসোস, খানিক ব্যস্ততা:
“আড়তে মাছ ছিল না, ঘাট থেকে এনে বসেছি। ওই পাশের কোনো দোকানে আজ ইলিশ নেই।”
কাছে উলুন বাজারেও একই হাহাকার। মনির হোসেন নামের এক বিক্রেতা জানালেন, ঈদের পর থেকে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। তিনি এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম হাঁকছেন ৩ হাজার ২০০ টাকা, মানে একেকটা মাছ ৪ হাজারের কাছাকাছি!
এমন দামে ইলিশের কথা শুনেই অনেক ক্রেতা পেছন ফিরছেন—
“এই মাছ আমাদের জন্য না। মাঝে মাঝে পরিবারের আবদারে কিনি। আত্মীয় আসছে, তাই কিনতে এলাম। কিন্তু এত দাম হলে তো পাতে নয়, স্বপ্নেই থাকুক ইলিশ।”
সরকারের ‘দাম বেঁধে দেওয়ার’ চিন্তা, বাজারে ঝড়
ইলিশের এই লাগামছাড়া দামে সরকারের চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। যেসব জেলায় ইলিশ ধরা হয়, সেসব উৎসস্থলে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ।
কিন্তু এই ঘোষণায় খুশি নয় চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,
“ইলিশের দাম বেঁধে দিলে আমরা বিক্রিই বন্ধ করে দেব। এটা বাস্তবসম্মত নয়।”
তাদের দাবি, নদীর ঢেউ আর মাছের দাম একই— আগে থেকে আঁচ করা যায় না।
কোথাও নেই স্বস্তি, দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ
ঢাকার অন্য বাজারগুলোতেও একই দৃশ্য—
৩০০–৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি ১,২০০–১,৪০০ টাকা,
৮০০ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,২০০–২,৫০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো মৌসুম পুরোপুরি শুরু হয়নি। আগেভাগেই বাজারে এই আগুন, সামনে কী অপেক্ষা করছে কে জানে!
বিশেষজ্ঞ বলছেন— এই দাম অযৌক্তিক
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন,
“মে-জুন থেকে ধীরে ধীরে ইলিশ পাওয়া যায়। বেশি আসে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু জুলাইয়ের শুরুতেই এমন দাম! এটা তো ইলিশের ইতিহাসেও নজিরবিহীন।”
শেষ কথা: পাতে নয়, এখন স্বপ্নেও ইলিশ বিলাসিতা
ইলিশ শুধু একটা মাছ নয়, বাঙালির আবেগ, রসনার রাজা। কিন্তু আজ সেই ইলিশ হয়ে উঠেছে অনিয়ন্ত্রিত বাজারের খেলনার মতো— যার পেছনে ছুটছে মানুষ, কিন্তু পাচ্ছে না নাগাল।
সরকার যদি উৎসস্থলে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারে, বাজারে জবাবদিহি আনে, তাহলে হয়তো আবার একদিন বর্ষার বৃষ্টির দিনে গরম ভাত আর ইলিশ ভাজা একসাথে মিলবে। এখন শুধু অপেক্ষা— সেই দিনের।
জাকারিয়া ইসলাম/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
ইলিশের হাহাকার: বাজারে ‘সোনার মাছ’, দামে আগুন
- আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৪:৫৫:৩২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ০৪:৫৫:৩২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ